বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১১

কালো টাকা সাদা: এনবিআর কিছু না বললেও ধরবে দুদক

কালো টাকা সাদা করতে দেওয়া সুযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো আপত্তি না দিলেও ওই টাকার মালিককে প্রশ্নের মুখে ফেলতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক)’ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করা সংক্রান্ত এসআরও (স্ট্যাটুট্যারি রেগুলেটরি অর্ডার) সংশোধন করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এসআরও ছাড়াও অর্থ সংক্রান্ত আইন যেমন, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিট্যান্স অ্যাক্ট এবং এন্টি টেরোরিস্ট ফাইনান্সিং অ্যাক্ট সংশোধন করার কথাও জানান অর্থমন্ত্রী।

এসআরও আইন সংশোধনের মাধ্যমে কালোটাকা সাদা করা বিষয়ক নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে। এর মাধ্যমে আয়কর আইনে কোনও প্রশ্ন তোলা না গেলেও অন্যান্য আইনে কালোটাকা সাদাকারীকে আইনের আশ্রয়ে নেওয়া যাবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে পুঁজিবাজার ও সরকারি ট্রেজারি বন্ডে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয় সরকার।

১০ ভাগ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করা যাচ্ছে। আইন সংশোধনের পর আয়কর বিভাগ কিছু না বললেও দুর্নীতি দমন কমিশন ইচ্ছা করলেই ওই টাকার মালিককে অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে।

বর্তমান এসআরও আইন অনুযায়ী, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হলে আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা যায় না।

এসআরও আইন সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আয়কর অধ্যাদেশের যে এসআরও আছে সেটা আমরা সংশোধন করছি। এখন এটা আইন মন্ত্রণালয়ে আছে। শিগগিরই এটা জারি করা হবে।’

এসআরও আইন সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আইনটি সংশোধন হলে অপ্রদর্শিত আয় শতকরা ১০ভাগ কর দিয়ে তা বৈধ করা যাবে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অপ্রদর্শিত অবৈধ আয়ের উৎস খুঁজতে পারবে।

বিদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা ও সন্ত্রাসী অর্থ যাতে অপ্রদর্শিত আয়ের সুযোগ না নিতে পারে, সে লক্ষ্যেই এসআরও সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান এসআরওটা সাধারণভাবে লেখা আছে। প্রশ্ন না করার বিধানটা শুধু যে আয়কর অধ্যাদেশের আওতায় থাকবে এটা আমরা সুনির্দিষ্ট করে দেব।’

তিনি বলেন, ‘অন্য আইনে এ সুবিধা পাওয়া যাবে না সেটাই এসআরওতে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে  দেওয়া হবে।’

অর্থমন্ত্রী বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এর মানে হলো, পাচার করা ও সন্ত্রাসী অর্থ যাতে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ না নিতে পারে সেজন্য মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিরোধী আইনে (এন্টি টেররিস্ট ফাইনান্সিং অ্যাক্ট) প্রশ্ন করা করা যাবে। তিনি বলেন, ‘যদি টাকা পাচার করে আনে তাহলে ধরা হবে।’

পুঁজিবাজারে সাদা হওয়া কালো টাকা ব্যবহারে মুদ্রা পাচার ও সন্ত্রাসী অর্থায়নের বিষয়ে সম্প্রতি এশিয়া প্যাসিফিক গ্র“প অন মানি লন্ডারিং (এপিজিএমএল) সরকারকে চিঠি দিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘গত মাসে ভারতে এপিজিএমলের বৈঠকের বিষয়ে আমরা এখানে পর্যালোচনা করেছি।’

মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স অ্যাক্ট সংশোধন হলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানে সুবিধা হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।

মুহিত বলেন, মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিটেন্স অ্যাক্ট ও এন্টি টেরিরিজম ফাইনান্সিং অ্যাক্টে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় ড্রাফট তৈরি করেছে। আইনটি হলে বাইরের দেশ থেকে তথ্য সরবরাহ ও টাকা ফেরত আনতে বাধা থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘আগে বাধা ছিল, আইন হলে আমরা ১২টা দেশের সঙ্গে এখন চুক্তি করতে পারবো। অনেক দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আইন হলে আরও দেশ চুক্তি করবে।’  

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বাইরে পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল এসিসট্যান্স অ্যাক্ট করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে কোন দেশে অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়ার পর ওই অর্থ ফিরিয়ে আনতে সে দেশের আইনী সহায়তা পাওয়া যাবে। এমন কি পাচার করা অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে ব্যবস্থা নেয়া (মামলা করা) যাবে।’

এদিকে সড়ক উন্নয়নে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে যোগাযোগমন্ত্রীর করা অভিযোগের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক নয়, উনি না বুঝেই হয়তো তা বলেছেন।’

এ বিষয়ে তিনি আরও কোনও কথা বলতে রাজি না হয়ে বলেন, ‘আমি এখন এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলবো না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক চলছে। সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও রয়েছেন।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন